Monday 19 March 2018

কম খরচে ঘুরে আসুন সপ্নের কাশ্মির ও লেহ-লাদাখ ভারত ভ্রমন

স্বভাবগত ভাবেই এই জগতের সকল মানুস স্বপ্ন প্রিয়। নানান মানুষের বাহারি রকমের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে আজ সবার সামনে হাজির হয়েছি এমনি এক ট্যুর প্ল্যান নিয়ে। এই অধমের সল্প জ্ঞান ও অতি সামান্য অভিজ্ঞতার আলোকে এটি সাজানো হয়েছে। একটু মনযোগ দিয়ে পরবেন। আশা করি অনেকেই উপকৃত হবেন।


আপনারা হয়ত সবাই জানেন যে, Darjeeling, Kalimpong, Peling, Simla, Manali, Leh-Ladakh, Kargil, Kashmir পৃথিবীর বিখ্যাত ও সর্ব বৃহৎ Himalayan Mountains এর এক একটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ যা কিনা ভারতবর্ষে বিরাজমান। তাই আপনি চাইলেই যেকোনো পথে কাশ্মির ও লেহ-লাদাখ যেতে পারেন। কিন্তু আমার মতে নিম্ন পথগুলি বেছে নেয়াটাই উত্তমঃ
রুট-১ ঢাকা-কালকাতা-দিল্লি-লেহ লাদাখ-কারগিল-কাশ্মির
রুট-২ ঢাকা-কালকাতা-দিল্লি-শ্রীনগর-কারগিল-লেহ লাদাখ
রুট-৩ ঢাকা-কালকাতা-দিল্লি-মানালি-লেহ লাদাখ-কারগিল-কাশ্মির
উপরিউক্ত রুটগুলর আলোকে আমার লেখনিকে সাজিয়েছি ৯টি পর্বে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, সবার budget এক না। টাই খরচের টুকিটাকি স্কিপ করে গেলাম। যারা যারা জানতে ইচ্ছুক কমেন্ট করে জানাবেন।
আজ শুধু রুট-১ পর্ব ১ নিয়েই লিখব। আপনাদের ভাল/খারাপ যাই লাগুক দয়া করে জানাবেন। আপনাদের response এর প্রেক্ষিতে পরের গুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রথমে ঢাকা থেকে কলকাতা চলে যান বাই বাস(এসি/নন এসি)/ট্রেন/এয়ার। সেখান থেকে দিল্লি বাই এয়ার অথবা ট্রেনে যাওয়াটাই ভাল। আপনি যদি কলকাতা বাই এয়ার এ যান তবে চেষ্টা করবেন দিনের শেষ ফ্লাইট নেয়ার। গ্রুপ এর সদস্য সংখ্যা যদি বেশি থাকে তবে এয়ারপোর্ট এই রাতটা কাটিয়ে দিতে পারেন গল্প গুজব আর হাসি ঠাট্টায়। এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিব কানে কানে। সাবধান ভুলেও কারো সাথে শেয়ার করবেন না। দিল্লি থেকে লেহ এয়ার টিকেট ভুলেও আগে কাটবেন না। সবচেয়ে ভাল হয় যাওয়ার এক দুইদিন আগে কাটলে সেক্ষেত্রে বহুত ফায়দা হবে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে......নিচের লিঙ্ক এ ঢুকে দেখতে পারেনঃ

মুহতারামে হাজেরিন, আশা করি আপনার সারা রাত অনেক আনন্দ বিনোদনেই কেটেছে। আপনার ফ্লাইট যদি খুব সকালে হয় তবে Indira Gandhi Intl Airport থেকে চলে যান Domestic এ। boarding pass নিয়ে security check in করে সোজা উঠে বসুন প্লেন এ। দিল্লি থকে লেহ প্রায় ২ ঘণ্টা । যদি সারারাত না ঘুমিয়ে থাকেন তবে ভুলেও এক মুহূর্ত এর জন্য হলেও চোখ বন্ধ করবেন না। আপনি হয়ত বিশ্বাস করবেন না যে কি বিস্ময় অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। কিছুক্ষন পরেই প্লেন এর জানলা দিয়ে যে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পারবেন… বরফ ঢাকা পাহাড় …… মনে হবে যেন ice cream এর দুনিয়া… কি যে সুন্দর… কি যে সুন্দর কিভাবে বুঝাই! একটু পরই ডান পাশে তাকালে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে Pangong লেক। প্লেন থেকে Pangong লেক এর ভিউ- মনে হবে যেন স্বর্গের জানলাটা খানিকক্ষণের জন্য খুলে গেলো । আপনার ভাগ্য যদি খুব বেশি ভাল থকে তবে peaks of K2, Nanga Parba, Gasherbrum দেখতে পারবেন। আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি যদি সত্যি কার অর্থে একজন ভ্রমন পিপাসু হয়ে থাকে তবে পুরো লাদাখ ট্রিপ এক বিস্ময় এর ঘোর নিয়ে কেটে যাবে। লেহ Kushok Bakula Airport এক দেখার মত জিনিস। প্লেনটা এইখানে ল্যান্ড না করলে জীবনেও বিশ্বাস করবেন না কেউ যে এটাকে একটা এয়ারপোর্ট বলে। একটা ছোট্ট ঘর আর চারপাশে পাহাড় আর পাহাড়।

এয়ারপোর্ট এ কিছু formality শেষ করে একটা গাড়ি ভারা করে সোজা চলে যান হোটেলে। সেখানে check in করে নাস্তা খেয়ে কিছু সময় বিশাম নিন। তারপর প্রথমেই যে কাজ টা করবেন তা হল পরবর্তী দিনগুলোর জন্য একটা অনুমতি নেয়া। নুব্রা ভ্যালী আর Pangong লেক যেতে বাংলাদেশী দের একটা অনুমতি নিতে হয়। হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমেই যাবেন লেহ Palace এ । লেহ এর রাজার বাড়ি। সে এক “আট কুঠুরি নয় দরজা” type ব্যাপার। কত কত গলি ঘুপচি। লেহ প্যালেস ঘোরা হলে চলে যান শান্তি স্তুপা (peace pagoda)। দারুন জায়গা। অনেকটা দারজিলিং এর Japanese temple এর মত। ওখান থেকে লেহ এর দারুন panaromic ভিউ দেখা যায়। অবশেষে hall of fame দেখে স্থানীয় মার্কেটে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করুন। লাদাখ এর একটা জিনিস খুব ভাল। ওখানে অনেকক্ষন দিনের আলো থাকে। এখানে সন্ধ্যা হয় প্রায় ৮ টার দিকে। এরপর হোটেলে ফিরে পরের দিনের প্ল্যান করে ফেলুন। গ্রুপে মানুষের সংখ্যা যদি বেশি থাকে তবে ভালো দেখে একটা গাড়ী ভাড়া করে ফেলুন। পাহাড়ি এলাকায় ড্রাইভার ভাল হওয়াটা ভীষণ জরুরী । সারারাত এয়ারপোর্ট এ নির্ঘুম রাত কাটিয়ে নিশ্চয় অনেক ক্লান্ত সবাই। তাই রাতের আহার শেষ করে নাক ডেকে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে নিন।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বের হয়ে যান । আজকের গন্তব্য......আরে বলছি তো একটু সবুর করুন। উপরে দিগন্তজোড়া আকাশ আর চারিদিকে উঁচু-নিচু পাহাড় আর পাহাড়। এ যেন এক অন্য রকম দুনিয়া। গাড়ি চলছে তো চলছেই আর হেমন্ত মুখপাদ্ধায় সেই বিখ্যাত গান......এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো। গাড়ি চলতে চলতে এরপর পেয়ে যাবেন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু Motor driven road “Khardungla Pass” ৫,৬০২ মিটার (১৮,৩৪০ ফিট)। মন ভরে উপভোগ করুন সেই অপার সৌন্দর্য। এরপর আবার যাত্রা শুরু। একটু পর পথেই পাশেই পরবে Diskit Monestry. সেখানে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে আবার যাত্রা শুরু Nubra Valley র উদ্দেশে। যাত্রা পথে একটু পরেই পড়বে Hunder Village. সেখানে দুই কুজ ওয়ালা উট চড়ে ঘুরে বেড়ান বেশ কিছুক্ষন। পরিশেষে Nubra Valley তে এসে হোটেল এ চেক ইন করে রাতের খাবার খেয়ে নিন। হোটেলেই রাত্রিযাপন।
আজ তবে এততুকুই থাক। আপনাদের কারো কোন জিজ্ঞাসা,পরামর্শ থাকলে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
বিদায় নিচ্ছি।
ভালো থাকুন। ভালো রাখুন।।

No comments:

Post a Comment