Tuesday 20 March 2018

কম খরচে ভ্রমন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন কক্সবাজার

দেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কোনটা জিজ্ঞেস করলে চোখ বন্ধ করে বলবো সেন্ট মার্টিন। প্রতি বছরে যাওয়া হয় তাও খায়েস মিটে না। যাইহোক, এবার সেন্ট মার্টিন ঘুরেছিলাম একটু অন্যভাবে। সাধারনত যারা সেন্ট মার্টিন যায় বেশিরভাগই জেটি, বাজার, বীচ আর বোটে করে ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে আসে। সেন্টমার্টিনের ভিতরে বা চারপাশে খুব একটা ঘুরা হয় না।
.
তাই এবার গিয়েছি সেন্ট মার্টিনের ভিতর দিয়ে ভ্যানে করে ছেঁড়াদ্বীপ। ভ্যানে করে যাব শুনে অনেকেই ভ্যাটকাচ্ছিল, কিন্তু রুবেল নামে এক ভ্যান চালক বলল অন্যের কথায় কান দিয়া কাম নাই, চলেন নিয়া যাই। উনি নিয়ে যাবেন। দুই তিন ঘন্টা থাকবেন আবার নিয়ে আসবেন। ৫০০টাকায় ঠিক করলাম।
.




যেতেযেতে অনেক কিছুই দেখা হল যা গত কয়েকবার সেন্টমার্টিন যেয়েও দেখা হয় নি। সেন্ট মার্টিনের মাঝখান দিয়ে কিছু পাকা কিছু কাচা রাস্তা পার করে দ্বীপের একেবারে প্রায় শেষ দিকে চলে গেলাম ভ্যানে করে । এরপর আসলেই আর যাওয়ার মত অবস্থা নাই, কারন বালিগুলো খুবই নরম। চাকা ডেবে যায়।( মাঝে কিছু রাস্তা নামার লাগছে নরম বালি বলে, দুই এক মিনিট হেঁটে আবার ভ্যানে)
এরপর ১০-২০ মিনিট হাটলেই ছেঁড়া দ্বীপ। হাটার স্পিডের উপর নির্ভর করবে কত সময় লাগবে, এলবামে সিরিয়ালি দেয়া আছে, ছবি দেখলেই বুঝবেন।

.
আমরা আর ভ্যানে করে ফিরি নি, পশ্চিম বিচ দিয়ে হেঁটে এসেছি। সাধারনত এদিক দিয়ে মানুষজন/পর্যটক খুব একটা যাওয়া আসা করে না। যারা সাইকেল নিয়ে আসে পুরো দ্বীপ ঘুরবে বলে তারাও এখনে সব জায়গায় দিয়ে যেতে পারে না কারন নরম বালি আর পাথর। তবে কষ্ট করে হেঁটে যেতে পারলে দেখার মত অনেক কিছুই আছে। কিছু জায়গা আছে খুবই নির্জন। যতদূর চোখ যায় কাউকে দেখা যায় না। সময় নিয়ে গেলে একবার এভাবে পুরো দ্বীপটা ঘুরে দেখতে পারেন। যারা দেখেননি তাদের নতুন এক্সপেরিয়ান্স হবে। আর বর্ষাকালে ঘুরতে পারলে আরো জোস তবে রিস্কি। 

.
এবার কিছু ফ্রি ইনফরমেশন দেই।
বাসঃ নন এসি বাস ঢাকা থেকে টেকনাফ ৯০০ এসি ১৭৫০। তবে টিকেট কাটার আগে অনলাইনে দেখে নিয়েন টিকেটের কি হাল। যদি দেখেন বাসের সিট বেশিরভাগে খালি তাহলে এসি বাসে দামাদামি করে কমাতে পারবেন। আমরা ১৭৫০ টাকার এসি বাসে ১৩০০টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম 
.
শীপঃ যদি ভাল ভিউ চান তাহলে কেয়ারী সিন্দাবাদের ওপেন ডেক, যদি তাড়াতাড়ি যেতে চান তাহলে গ্রীন লাইন, যদি টেবিলে বসে খাইতে খাইতে যেতে চান তাহলে কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন। ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৪০০
.
হোটেলঃ যদি নিরিবিলি জায়গায় থাকতে চান তাহলে পশ্চিম দিকের রিসোর্টগুলোতে থাকতে পারেন। সাইয়রী, কিংশুক, লাবিব এগুলো ভালই। তবে দোকানপাট অনেক দূরে। যদি অনেক পোলাপাইন সহ কমদামে জেটির কাছে ভাল হোটেল চান তাহলে ব্লু মেরিনের কুটির নিতে পারেন। ১০বেড ৩০০০/-। আর যদি বাজার, জেটি, প্লাস বারান্দা থেকে সরাসরি সাগর দেখতে চান তাহলে প্রিন্স হ্যাভেনে উঠতে পারে। এর মত ভিউ অন্য কোন হোটেলে নাই তবে সরি টু সে ভিতরে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ২৫০০-৩০০০ দিয়ে এমন হোটেলে আসলে পোষায় না শুধু ভিউ ছাড়া।
এছাড়াও বাজারের মধ্যে ৫০০-৬০০টাকাতেও অনেক হোটেল আছে দামাদামি করে নিতে পারেন।
.ভ্যানঃ জাহাজ আসলে ১০০টাকা আর জাহাজ চলে গেলে ২০টাকা হয় ভ্যানের ভাড়া। ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ভ্যানে চইড়া হুদা টাকা খরছ না করাই ভাল।
.
গলাচিপা জায়গাটা সুন্দর। জেটি থেকে আধাঘন্টা হাটলেই পেয়ে যাবেন। এখানে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই পাশের বীচ দেখা যায়।
.
খাবারঃ সেন্টমার্টিনে সব জায়গায় খাবার একি। মোটা চালের ভাত, ডাল, মাছ। সব মাছ রান্নার প্রসেসও একি। হলুদ, মরিচ, লবন দিয়ে কড়কড়া ভাজি। ভাত ডাল আনলিমিটেড আর মাছ অনুযায়ী দাম আপডাউন করে। ১০০-১৫০ এর মধ্যে চাইলে দুপুর/রাতের খাবার খেতে পারেন। আর সকালে নাস্তা ৫০-৬০ টাকায় হয়ে যাবে
.
এবার সবচেয়ে সাশ্রয়ী সাজেশন।পারত পক্ষে বন্ধের দিনে যাইয়েন না। ছুটি নিয়ে সাপ্তাহের মাঝে যান। সবকিছু অর্ধেকের চেয়েও কম দামে পাবেন প্লাস জায়গাটাও নিরিবিলি পাবেন।
.
লাস্ট, সেন্টমার্টিনে ময়লা ফেলার কোন নির্দিষ্ট জায়গা দেখি নি, এরমানে এইনা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে দিবেন। প্লাস্টিক প্যাকেট, পানির বোতলের কাজ শেষ হলে প্রয়োজনে হাতে/ব্যাগে রাখবেন, হোটেলে এসে ময়লার ঝুড়িতে ফেলবেন। নাহয়লে কয়দিন পরে আর প্রবাল দ্বীপ না, ময়লার দ্বীপ ভ্রমনে যেতে হবে।

No comments:

Post a Comment