Monday 19 March 2018

কম খরচে সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা

কম খরচে (২৫০০ টাকা মাত্র)আসুন সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা থেকে.....
আমার কাছে এই মৌসুমটাই বেস্ট। কারণ এখন না শীত না গরম, সূর্য উদয় এবং অস্ত দেখা যাচ্ছে সুন্দরভাবে, সমুদ্রে ঢেউ আছে তবে সেটা ভয়ংকর কিছু নয়, পর্যটকদের এতটা ভীড়ও নেই, হোটেল ভাড়াও কম। প্রথমেই বলে রাখি ঢাকা থেকে বেশ কয়েকভাবেই কুয়াকাটা যাওয়া যায় তবে সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত হচ্ছে লঞ্চে যাওয়া। লঞ্চেও তিনভাবে যাওয়া কুয়াকাটা যাওয়া যায় তবে পটুয়াখালী হয়ে যাওয়া বেস্ট(আমার মতে)। যেহেতু পটুয়াখালী হয়ে যাওয়া বেস্ট (আমার মতে) তাই আমি এটার বর্ণনা দিচ্ছি।

#কিভাবে_যাবেন
সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী গামী লঞ্চে উঠুন। লঞ্চে ছেড়ে যায় বিকেল ৫-৬টার মধ্যে। ডেকের ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকার মত। কম খরচে যেতে চাইলে স্টাফ কেবিনেও যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকার মত (স্টাফ কেবিন, ২-৩ জন ঘুমানো যাবে আরাম করে)। লঞ্চ পটুয়াখালী ভিড়বে সকাল ৫-৫:৩০ টার মধ্যে। ভোর হওয়াটা দেখতে পাবেন। কি সুন্দর নদী, নদীর পাড়, মাছ ধরার নৌকা, আস্তে রক্তিম সূর্য মামা উঁকি দিবে। আহা কি সুন্দর। এই সব কিছু দেখতে পাবেন বগা পাড় হওয়ার পর থেকে । অটো নিয়ে চলে আসুন বাস টার্মিনাল। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। কুয়াকাটা গামী বাসে উঠুন। কুয়াকাটা আসতে সময় লাগবে ১:৩০-২ ঘন্টা। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১২০-১৪০ টাকা।
কুয়াকাটা নেমে আগে হোটেল বুকিং দিন অথবা বিভিন্ন উৎসবে যাওয়ার আগে অবশ্যই আগে হোটেল বুকিং দিয়ে যাবেন। এখন পর্যটক কম তাই আপনি রুম পাবেন তবে কোন দালাল বা মোটর সাইকেল ওয়ালার খপ্পরে পড়বেন না। নিজে নিজে রুম দেখে বুকিং দিন। দর দাম করে নিন। দর দাম না করলে ঠকবেন। সিঙ্গেল রুম ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যে পাবেন। ডাবল রুম ১০০০ টাকার মধ্যে পাবেন (৩-৪ জন এমনিতেই ঘুমানো যাবে।) সকাল ৮টার মধ্যে পৌঁছিয়ে যাবেন কুয়াকাটা।
#ঘুরাঘুরি
রুম বুকিং দিয়ে নাস্তা করে ঝাপিয়ে পড়ুন সমুদ্রে। আহা!!! কোন কথা হবে না খালি ডুব হবে। নাক, কান,চোখ,মুখ দিয়ে লোনা পানি ঢুকলেও ডুব চলবে। দুপুর একটার মধ্যে চলে আসুন হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়ুন। দুপুরের দিকে যেতে পারেন লেবুর বন, শুটকি পল্লী, ফিস ফ্রাই, তিন নদীর মোহনা, ঝিনুক বীচের দিকে। মোটর সাইকেলে যাবেন ভাড়া পড়বে ২০০ টাকার মত (দরদাম করে নিন)। ফিস ফ্রাই এ বসে সামুদ্রিক মাছ ভাজা/ কাঁকড়া খেতে পারেন। বিকেলে দিকে চলে আসুন কুয়াকাটার মেইন বীচের। সূর্য ডোবা দেখুন। চোখ জুড়িয়ে যাবে। বসে থাকুন যতক্ষণ খুশী অথবা রাখাইন মার্কেট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তার পরের দিন সূর্য উদয় দেখতে যাবেন। আগের দিনই মটর সাইকেল বুকিং দিয়ে রাখুন। সূর্য উদয় সহ বারোটি স্পট একবারে ঘুরে আসুন মটর সাইকেলে ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকার মত (অবশ্যই দামাদামি করবেন)। সূর্য উদয় দেখতে হলে রেডি হতে হবে ভোর ৫টার মধ্যে। ভোর বেলার সমুদ্র আপনাকে অন্য রকম একটা অনুভূতি দিবে। সূর্য উদয় সহ অন্যান্য স্পট দেখে কুয়াকাটা ফিরে আসবেন। রাখাইন পল্লীতে গিয়ে কিছু কিনতে পারেন এবং অবশ্যই মহুয়ার পাটিসাপটা পিঠা খেতে ভুলবেন না। ফিরে আসার সময় পড়বে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। দেখে আসতে ভুল করবেন না। কুয়াকাটা ফিরে আসতে আসতে সকাল ১০টার মত হয়ে যাবে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার যান সমুদ্রে ঝাপাঝাপি করতে অথবা নৌকায় করে যেতে পারেন ফাত্রারার বন। ফাত্রারার বন যেতে চাইলে আগেই নৌকা বুকিং দিতে হবে। দুপুরে রুমে এসে নাস্তা করে হালকা শপিং করে নিতে পারেন।
#ফিরে_আসা
কুয়াকাটা থেকে সরাসরি বাস করে ঢাকা আসতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৫৫০টাকা। বাস ছেড়ে আসে ৫:৩০-৬:৩০ মধ্যে। বাসের টিকেট আগেই বুকিং দিন। অথবা কেউ যদি লঞ্চ আরামসে আসতে চান তাহলে তাকে ১:০০ একটার মধ্যে কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্য বাসে উঠতে হবে। বাস পটুয়াখালী আসবে ২:৩০-৩:০০ মধ্যে। পটুয়াখালী নেমে খাওয়া শেষ করে, কিছু খাবার পার্সেল করে নিয়ে লঞ্চে উঠুন। মনে রাখবেন পটুয়াখালী থেকে বিকাল ৫:০০-৫:১৫ মধ্যে সব লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। তারমানে আপনাকে এর মধ্যেই সব আসতে হবে পটুয়াখালী।
#খরচ
২ দিন ১ রাত থাকা এবং ঢাকা থেকে যাওয়া আসা এবং খাওয়া মিলে আমার খরচ পড়ছে ২৫৩৯ টাকার মত (ফাতাত্রার বন সন ২৮৫৫টাকার মত)। আমরা ছিলাম তিনজনের গ্রুপ। তারমানে আপনি সিঙ্গেল হোন বা গ্রুপ ২৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে কুয়াকাটা ঘুরে আসতে পারবেন। তাহলে আর দেরী কেন? ঘুরে আসুন সমুদ্রকন্যার কাছ থেকে।
আর জানেন তো সমুদ্রের ডাক উপেক্ষা করা অনেক কঠিন

No comments:

Post a Comment