Saturday 31 March 2018

ঘুরে আসলাম ট্রেজার হাউজ অফ আর্ট এবং দ্যা লাস্ট হিমালায়ান কিংডম ভুটান

বিদঘুটে হর্নের শব্দহীন একটা দেশ ভুটান! শান্ত, সুনিবিড় আর কোলাহলমুক্ত! পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর, ভদ্র এবং সুসভ্য নাগরিক, স্রোতোবহা এবং স্বচ্ছ নদী আর বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড় দেখতে চান? সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে অসাধারণ মনুমেন্ট, স্ট্যাচু, বৈদেশিক কালচার, স্নো ধরার সুযোগ ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু!
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সর্পিল রাস্তা। তীব্র গতিতে বাক নিচ্ছে ড্রাইভার। হাত ফসকালেই হাজার মিটার নিচে ছিটকে পড়বে। কতো গাড়ি পাশ কাটাচ্ছে। কিন্তু কেউ হর্ন দেয় না। এতো অবাক লাগলো দেখে আমার! আমাদের দেশে হর্নের শব্দে টেকা দায়!
মানুষ জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দেখলে গাড়িগুলো অটোমেটিক থেকে যাচ্ছে, কি আশ্চর্য! কতো সভ্য ওরা! আবার মানুষ থেমে যাচ্ছে দেখে ড্রাইভাররা সংকেত দিয়ে বলছে, " তুমি যাও!"
আমরা গিয়েছি ৪ জন অফিসের কলিগ। ৫ দিন ছিলাম। প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো লেগেছে। ঘুরেছি থিম্পু, পারো এবং পুনাখা!

যেতে লাগবে কি?
- ভারতের ট্রানজিট ভিসা! ভিসা ফর্ম ফিল আপ করে এপ্লাই করেন, চৌদ্দ - পনের দিনের ভিসা পাবেন। যাওয়ার সময় ৩ দিন, এবং আসার সময় ৩ দিন চাইলে ভারত ঘুরতে পারবেন। বাসের টিকেটটা টাইম মিলিয়ে কাটবেন যাতে ভিসা পাওয়ার পরে ওই টিকেটে যেতে পারেন।
আপনি চাইলে আকাশপথেও যেতে পারেন। আমরা যখন যাই তখন টিকেট এভেইলএবল ছিলো না, একটু আগেই কাটবেন টিকেট যদি এয়ারে যেতে চান! ওখানে গেলে অন এরাইভাল ভিসা দিয়ে দিবে।

আমি ২১ তারিখ রাতে শ্যামলী পরিবহনে রওয়ানা দেই। বহুকষ্টে অফিস থেকে দুইদিন ছুটি নেই, তারসাথে ৩ দিন টানা ছুটি মিলিয়ে ৫ দিনের প্ল্যান নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
কল্যাণপুর - বুড়িমারি ; যাত্রা বাসে ; সময় লাগবে প্রায় ১০/১১ ঘন্টা, টিকেটের দাম নিবে ১৩০০-১৫০০ টাকা।
ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া লাগবে ৫৫০ টাকা। এটা বাসেই দিয়ে দিবেন, তাহলে ওরাই প্রসেস করে দিবে আপনার পাসপোর্ট।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে যাবেন তারপর। ওখানে গিয়ে ছবি তোলা লাগবে। আপনি চাকুরীজীবী হলে অবশ্যই NOC লেটার নিয়ে যাবেন। তারপর বাংলাদেশি কাস্টমস ক্রস করে ইন্ডিয়ান কাস্টমস ক্রস করবেন। তারপর ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে প্রসেসিং করবেন। এখানে ১০০ রুপি দালালকে দিলে কাজ ত্বরান্বিত হবে। পাসপোর্ট এর কাজ শেষ হলে টাকা এবং ডলার ভাংগায় ইন্ডিয়ান রুপি করে নিবেন। ভুটানে সবজায়গায় রুপি চলে। এখন আপনি ওয়েস্ট বেংগলের চ্যাংরাবান্ধায় আছেন।
চ্যাংরাবান্ধা - জয়গাও; যাত্রা মিনি মাইক্রোতে ; সময় লাগবে ৩/৪ ঘন্টার মতো ; ভাড়া লাগবে ১৪০০-১৭০০ রুপি, ৬ জন বসতে পারবেন অনায়াসে।

জয়গাও হলো ভারত-ভুটান বর্ডার। ভারতে হলো জয়গাও আর ভুটানে হলো ফুন্টসোলিং। ভারত-ভুটান ওপেন বর্ডার। কোন হ্যাসেল নাই। ভারত ইমিগ্রশন অফিসে গেলেই আপনার পাসপোর্ট এ সীল মেরে দিবে। তারপর হেটে ভুটানে ঢুকে পড়বেন এবং ভুটান ইমিগ্রেশন থেকে পারমিট নিয়ে নিবেন। ভারতের এলাকাটা নোংরা, কোলাহলপূর্ণ। ফুণ্টসোলিং ঢুকলেই আপনার মনে হবে অন্য এক দুনিয়ায় চলে আসছেন। সবকিছু নিয়ম মেনে চলছে। শান্ত, কোলাহলপূর্ণ এবং কোথাও কোন ধূলোময়লা নেই। মীনা কার্টুনের ভাষায় বলতে গেলে, " এ আমি কই আইলাম! "

ফুন্টসোলিং থেকে থিম্পু যেতে ৫/৬ ঘন্টা লাগে, বাহন ট্যাক্সি। ভাড়া লাগবে ২৫০০-৩০০০ রুপি। ৪ জন বসতে পারবেন। এখান থেকে বাসও যায়। তবে বাস সবসময় ছাড়ে না এবং পরিমাণে কম। আমরা ট্যাক্সি দিয়ে গিয়েছিলাম থিম্পু।
ফুন্টসোলিং থেকে থিম্পুর রাস্তায় পাবেন আসল ভুটানের স্বাদ! নৈসর্গিক দৃশ্য! এই জার্নির কথা কোনদিনও ভুলবো না। আহা! পাহাড়ের প্রতিটা বাক এখনো ভুলতে পারি না। প্রতিটা বাকে বাকে সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য!

শীতের ব্যাপারে কিছু কথা। ফুন্টসোলিং থেকে রাস্তা ধরে যতো থিম্পুর দিকে যাবেন তাপমাত্রা ততই কমবে। অবশ্যই অবশ্যই শীতের পোষাক নিবেন। আমরা রাত ১১:৩০ এ থিম্পু পৌঁছাই। গাড়ি থেকে বের হয়েই দাত কপাটি লেগে যাবার জোগাড়, এত্তো ঠান্ডা। শূন্য ডিগ্রী, হিমাংকের নিচে চলে যায় যায় অবস্থা। থার্মাল ইনার, আপার কিনে নিয়েছিলাম বংগবাজার থেকে, ওটা অনেক কাজে দিয়েছে। অবশ্যই কিনে নিবেন!

আমরা থিম্পুতে ছিলাম হোটেল টাক্টসাং এ! তারপর পারোতে গিয়ে ছিলাম হোটেল পারোতে। ফুন্টসোলিং এ ছিলাম হোটেল হ্যাভেন ইনে। ভালোই ছিলো হোটেলগুলো। ৪ জনের স্ট্যান্ডার্ড রুমে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ রুপি। যতো আগে বুক দিবেন তত কমদামে রুম পাবেন। রুমে টিভি, এসি, হিটার, গিজার পাবে এই রেটের মধ্যই। এর মধ্য কিছু ফ্যাসিলিটি কম নিলে আরো কম দামে রুম পাবেন। অনলাইম থেকে নাম্বার নিয়ে ডিরেক্ট কল দিয়ে হোটেল বুক করে ফেলবেন।
খাবার নিয়ে কিছু কথা বলি। সত্যি বলতে গিয়ে আমার খেতে কষ্ট হয়েছে। আমি ভেজিটেবল একেবারেই পছন্দ করি না। ওখানে ভেজিটেবল মোটামুটি ভালো আছে। ইন্ডিয়ান নন ভেজ রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে রাইস, চিকেন, মাটন সবই পাবেন। ইন্ডিয়ান ট্রাডিশনাল আইটেমগুলোও ওখানে পাবেন। ঘুরতে গেলে খাবার নিয়ে এতো চিন্তা না করাই উত্তম। প্রতিবেলার খাওয়াদাওয়া ১০০-১৫০ রুপির মধ্য করতে পারবেন। ওদের স্ট্রিটফুডগুলোও ভালো, ট্রাই করবেন
ঘুরতে যাবার জন্য ট্যাক্সি বেস্ট। প্রতিদিন ভাড়া এরাউন্ড ২০০০-৩০০০ রুপি। দরদাম করে নিবেন।

খুব প্রাণোচ্ছল আর সাহায্যকারী মানুষ ভুটানিজরা! আপনি যা জানতে চাইবেন তা জানানোর পরেও ওরা আপনাকে ছাড়বে না, আপনার যা জানা দরকার সব বলে দিবে। এতোই হেল্পফুল ভুটানিজরা। খুব বেশি করে মনে থাকবে চেলালা পাসের স্নো ধরার এবং দেখার স্মৃতি! আরো মনে থাকবে সাসপেনশন ব্রিজ, বুদ্ধের বিশাল স্ট্যাচু, মোচু নদীতে র‍্যাফটিং এবং ভুটানিজদের আতিথেয়তা!

No comments:

Post a Comment