Sunday 18 March 2018

প্রকৃতির ব্যতিক্রমী সৃষ্টি জাফলং ও বিসানাকান্দি সিলেট

বরাবরই সিলেট আমার খুবই প্রিয়। সর্ব সাকুল্যে পাঁচ বারের যাত্রায় চোদ্দ দিন সিলেট ঘোরার সুযোগ হয়েছে। তবে সিলেটের সবটুকু দেখা শেষ হয়নি এখনো। তবে, ঘোরার জন্য বর্ষাকাল নিঃসেন্দহে উত্তম সময়। অফসিজনে হোটেল ভাড়া কম পড়বে। পাশাপাশি, পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। তাই প্রকৃতির সান্নিধ্যে একান্তভাবে সময় কাটানোর সুযোগ বেশি। আর বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন নবযৌবনা। আজকের লেখাটির উদ্দেশ্যে হচ্ছে দু'দিনের জন্য যদি সিলেট ভ্রমণে যেতে চান তবে আপনার জন্য এটা একটা সাধরণ গাইডলাইন হতে পারে।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট : প্রকৃতির ব্যতিক্রমী সৃষ্টি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। বর্ষাকালে পানিতে নিমজ্জিত হিজল, খরচ, বেত, বরুনা আর মূর্তার ঘন ঝোপে আচ্ছাদিত থাকে উপমহাদেশের একমাত্র মিঠাপানির এই জলাবনটি। নিঃশব্দে নৌকাতে ঘুরে অপরূপ প্রকৃতির শীতল বাতাস আর পাখির কলতান আপনাকে বিমোহিত করবেই। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই জলাবনটি। সিলেট শহরের আম্বরখানা রোডের ইস্টার্ন প্লাজার সামনে থেকে লোকাল সিএনজিতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি 100 টাকার মতো। আর নৌকাতে ভাড়া পড়বে সাতশো থেকে আটশো টাকার মতো। তবে এক নৌকাতে চারজন ঘুরতে পারবেন অনায়াসে।
রাতারগুল ঘোরা শেষে বিসানাকান্দি যেতে হলে আপনাকে এরপর হাদারপার যেতে হবে।

বিসানাকান্দি : মেঘালয় রাজ্যের সাতটি সুউচ্চ পর্বতের মিলনস্থল হচ্ছে বিসানাকান্দি যেখানে অনেকগুলো ঝরণাধারার মিলিত প্রবাহ প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে স্নিগ্ধ পিয়াইন নদীর বুকে। শীতল এই স্রোতধারার স্বর্গীয় পাথুরে বিছানায় পাবেন প্রকৃতির মনোরম লাবণ্যের স্পর্শ। পিয়াইন নদীর দুইটি শাখা। একটি পাহাড়ের নীচ দিয়ে গেছে ভোলাগঞ্জ অন্যটি পাংথুমাই হয়ে জাফলং। তবে, হাদারপার থেকে নৌকা ঠিক করার সময় সাধারণত তিনটি স্পটে র জন্য নৌকা ঠিক করা হয়। বড়হিল ঝর্ণা (পাংথুমাই ঝর্ণা), লক্ষণছড়া আর বিসানাকান্দি। তবে, বর্ষাকালে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ঠিক করবেন। কেননা, শান্ত পিয়াইন নদী তখন প্রবল স্রোতে অশান্ত হয়ে যায়। আর, এখানে লাইফ সেভিং জ্যাকেট বা এরকম কিছু না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতঃপর ঘোরা শেষ হলে আবার সিলেট ফিরে আসবেন।

জাফলং : পাহাড় আর পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর অপূর্ব মিলনে সৃষ্ট নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এক তীর্থ ভূমি জাফলং। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং যা সিলেট শহর থেকে 62 কিলোমিটার দূরবর্তী। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সব পাহাড়গুলো, তার বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝর্ণা আর নরম তুলার মতো তার ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘমালা। জাফলংয়ের বুক চিরে বয়ে গেছে দুইটি নদী - ধলাই ও পিয়াইন। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে চোখে পড়বে ডাউকি ব্রীজ। নদী পার হলেই ওপারে খাসিয়াপুঞ্জি (খাসিয়াদের ভাষায় গ্রামকে পুঞ্জি বলে)। সংগ্রামপুঞ্জি যাওয়ার পথে দেশের প্রথম সমতল চা-বাগানটিও একফাকে দেখে নিতে পারেন। জাফলং শীত, বর্ষা দুই ঋতুতেই সুন্দর। তবে বর্ষাকালে পরিপূর্ণ, অন্তত আমর চোখে।

অতঃপর জাফলং থেকে সিলেট ফেরার পথে সারিঘাট নামবেন। এখান থেকে সিএনজি তে করেই সারি নদীর ঘাটে (লালাখাল) যাবেন।

লালাখাল : সিলেট শহর থেকে 35 কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালাখাল। নাম যদিও "লালাখাল" কিন্তু এটা কোনো খাল নয়। এটা সারি নদী। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচে লালাখালের অবস্থান। লালাখাল শীতকালে ই তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সারি নদীর গভীরতা অনেক বেশি। তাই বর্ষাকালে নদীতে তীব্র স্রোত থাকে। পাশাপাশি লালাখালের বিশেষত্ব যে কারণে, সেই পানির বিভিন্ন রঙ (নীল, সবুজ, স্বচ্ছ পানি) বর্ষাকালে পাবেন না। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে যদি আলিঙ্গন করতে চান তবে লালাখাল নিঃসেন্দহে আপনাকে বিমোহিত করবে এবং সেটি বর্ষাকালে।

No comments:

Post a Comment