Saturday 31 March 2018

৪ দিন সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মেঘালয় থেকে

এই বর্ষায় ৪ দিন সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন #মেঘালয়
ভিসা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাদ দিয়ে নিম্নবর্ণিত হিসাব অনুযায়ী ট্যাক্সি ও হোটেল ভাড়া মাঝামাঝি ধরলে খাবার, এন্ট্রি ফি ও পার্কিং ফি সহ ৪ জনের মোট খরচ হয় ১৭,৫০০ রুপি বা জনপ্রতি -৪,৩৭৫ রুপি (তামাবিল - মেঘালয়ে ৪ দিন - তামাবিল)।
মেঘ, পাহাড়, ঝর্ণা, জলপ্রপাতের দেশ মেঘালয়। বর্ষায় এখানে উঁচু উঁচু সবুজ পাহাড়ের মাথাগুলো প্রায় সবসময়ই শুভ্র মেঘে ঢাকা থাকে। সেই সব পাহাড় থেকেই ঝরে পড়ছে অজস্র ঝর্ণা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাঢ় সবুজ পাহাড়ের গায়ে কেউ যেন অজস্র সাদা রেখা এঁকে দিয়েছে। এই ঝর্ণাগুলোর জল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলো স্বচ্ছ জলের পাথুরে নদী বা খাল। যেগুলো বিশালাকার পাথরের বোল্ডারের মাঝ দিয়ে বয়ে চলতে চলতে গেয়ে চলেছে অপূর্ব সংগীত। একবার এই সংগীত ঠিকঠাকভাবে শোনা শুরু করলে মনে হয় আজীবন এখানেই রয়ে যাই। এইসব নদী বা খালের আকস্মিক পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে সেভেন সিস্টার্স ফলস্ বা নোহকালিকাই ফলস্এর মতো বিরাট আকারের জলপ্রপাতগুলো। যেগুলোর জল পতনের গর্জনে বুকে কাঁপন ধরায়। এর আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক গুহা, হ্রদ, জঙ্গল। মেঘালয়ের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে উপভোগ করা যায় মেঘের খেলা। মেঘ কখনো মাথার একটু উপর দিয়ে যাচ্ছে, কখনো ভিজিয়ে দিয়ে সাথে সাথে যাচ্ছে, কখনো রাস্তার একটু নিচ দিয়ে যাচ্ছে, আবার কখনো কয়েক পাহাড়ের মাঝের উপত্যকায় থেমে আছে। বর্ষায় মেঘালয় যেন তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দেয়।
মূলত ৪ জনের জন্য এই প্ল্যান।

.
.
১ম দিন : বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস বা ট্রেনে সিলেটের কদমতলী বাস স্ট্যান্ড পৌছতে হবে ভোরে। কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে জাফলং / তামাবিলগামী বাসে তামাবিল জিরো পয়েন্ট। লোকাল বাস ভাড়া - ৬০ টাকা। তামাবিল জিরো পয়েন্ট থেকে ২-৩ মিনিট হেটে তামাবিল কাস্টমস, ইমিগ্রেশন।
তামাবিল কাস্টমস ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ইন্ডিয়া প্রবেশ করে সে অংশের ডাউকি কাস্টমস, ইমিগ্রেশন। এখানের কাজ শেষ করে বেরলেই অনেক ট্যাক্সি চালক আপনাদের গন্তব্যস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘিরে ধরবে। ডাউকি ইমিগ্রেশনের সামনের ট্যাক্সিগুলো ভাড়া বেশি চায়। চাইলে এখান থেকেও ট্যাক্সি নিতে পারেন। ভাড়া একটু কমাতে চাইলে ১০-১৫ মিনিট হেটে সোজা রাস্তা দিয়ে চলে যান ডাউকি বাজার। ডাউকি বাজারে নাস্তা করে নিন।
এই প্ল্যান অনুযায়ী যেতে পারলে সকাল ১০-১১ টার মধ্যে ডাউকি বাজারে থাকবেন। ডাউকি বাজারে নাস্তা হিসেবে ২ পিস পরোটা + ১ বাটি চানা (বুটের ডাল) ৩০ রুপি নিবে। নাস্তা খেয়ে ট্যাক্সি বা মারুতি জীপগাড়ি রিজার্ভ করে ফেলুন। মারুতি জীপে সামনে ১ জন আর পেছনে ৩ জন বসা যায়।
ডাউকি বাজার থেকে ->
#উমক্রেম_ফলস্ ( রাস্তার পাশে) ->
#বপহিল_ফলস্ বা #বড়হিল_ফলস্ (রাস্তার পাশে, এদেশে পান্থুমাই ঝর্ণা নামে পরিচিত) ->
#নহওয়েত_লিভিং_রুট_ব্রিজ (রাস্তা থেকে একটু ভেতরে, ১০/২০ রুপি টিকেট) ->
#মাওলিনং_ভিলেজ (এশিয়ার সবথেকে পরিষ্কার গ্রাম, ২০/৩০ রুপি টিকেট) ->
#ক্রাংসুরি_ফলস্ আমলারেম (মাওলিনং ভিলেজ থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার পথ, টিকেট ১০ রুপি,এখানে দুপুরের খাবার খাবেন) ->
#শ্নোনেংপেডেং_ভিলেজ এই পুরো পথটুকুর জন্য ট্যাক্সি রিজার্ভ করুন। ভাড়া পড়বে ১৫০০-২০০০ রুপির মধ্যে। ট্যাক্সি ভাড়া দামাদামির দক্ষতার ভিত্তিতে কম বেশি হতে পারে।
অনেক রাত পর্যন্ত এই পাহাড়ি নদীর পাথরগুলোতে বসে জল-পাথরের অপূর্ব সংগীত শুনতে পারেন। রাতে শ্নোনেংপেডেং এ কটেজে থাকা। ব্রাইট স্টার কটেজে ৪ জনের জন্য ২ বেডের এক রুম ভাড়া ১২০০-১৬০০ রুপি। চাইলে তাবুতেও থাকতে পারেন। ৪ জনের এক তাবুতে ম্যাটস, বালিশ, কম্বলসহ ৭০০ রুপি।
দুপুরের খাবার খাবেন ক্রাংসুরি ফলস, আমলারেম এ। ভাত + সবজি + চিকেন নিবে ১০০-১২০ রুপি। রাতের খাবার শ্নোনেংপেডেং কটেজে। ভাত + সবজি + চিকেন/মাছ ১০০-১২০ রুপি।
.
.
২য় দিন : ভোরে ঘুম থেকে উঠে #উমংগট_নদীতে ঘুরাঘুরি করে কাছাকাছি ২ টি ঝুলন্ত ব্রিজে উঠে দেখে কটেজে ফিরে এসে সকালের নাস্তা খেতে পারেন। খুব স্বচ্ছ এই নদীর জল। পানিতে নৌকা চললে মনে হয় নৌকা হাওয়া ভাসছে। আর ব্রিজের উপর থেকে অনেকদূর পর্যন্ত নদীটি দেখা যায়। এই ব্রিজের নিচেই ২ টি নদী এসে মিলিত হয়ে এক ধারায় প্রবাহিত হয়েছে, এই মিলনস্থলটিও খুব সুন্দর।
২ পিস রুটি + চানা + চা এর জন্য ৩০ রুপি নিবে। নাস্তা করে আবার বেরিয়ে পড়ুন। কটেজের নিচেই ঘাট থেকে ২০০ রুপি দিয়ে নৌকা রিজার্ভ করে ঘুরে আসুন নদীর উজান থেকে। সুউচ্চ সব সবুজ পাহাড়ের মাঝ দিয়ে স্বচ্ছ পানিতে ভেসে বেড়ান ২-৩ ঘন্টা। কায়াকিং, স্নোরকেলিংও করতে পারেন।
এখানেই দুপুরের খাবার সেরে নিন। ভাত + সবজি + নদীর মাছ ১০০ রুপি নিবে। দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ট্যাক্সি রিজার্ভ করুন শ্নোনেংপেডেং থেকে চেরাপুঞ্জি (অন্য নাম সোহরা) পর্যন্ত। আগের দিনের ট্যাক্সিচালককে বললে সে এসে নিয়ে যাবে অথবা কটেজের মালিককেও বলে রাখতে পারেন। ভাড়া ১৫০০- ২০০০ রুপি। সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত।
সন্ধ্যার দিকে চেরাপুঞ্জি পৌছে হোটেল ঠিক করে নিন। ২ বেডের এক রুম ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ রুপি। সোহরা পুলিশক্যাম্প বা থানার কাছাকাছি কর সংরিয়া, মাস্টার পলের Gemia Hotel, 7 step এ থাকতে পারেন। #চেরাপুঞ্জি পৌছে হোটেল ঠিক করে বাজারে ঘুরাঘুরি করে অবশ্যই সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যেই বাজারের কোনো হোটেল থেকে খেয়ে নিন। সন্ধ্যা ৭ টার পর অধিকাংশ হোটেল বন্ধ করে দেয়। রাতের খাবার ভাত + সবজি + চিকেন ১০০ - ১২০ রুপি নিবে। পরেরদিনের জন্য ট্যাক্সি ঠিক করে হোটেলে ফিরে আসুন।
.
.
৩য় দিন : সকাল সকাল ট্যাক্সি ঠিক করে বেরিয়ে পড়ুন। হোটেল ম্যনেজারের রুমে ব্যাকপ্যাক রেখে শুধু ১ রাতের ভাড়া মিটিয়ে দিন। চেরাপুঞ্জি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা তাই সকালে বৃষ্টি থাকলেও বেরিয়ে পড়ুন। হয়ত ৩-৪ কি.মি. দূরেও বৃষ্টি হচ্ছে না। আবার সারাদিন ধরেও বৃষ্টি হতে পারে। বাজার থেকে নাস্তা সেরে ফেলুন ৩০ রুপি দিয়ে।
চেরাপুঞ্জি থেকে ->
#থাংকারাং_পার্ক ( টিকেট -১০ রুপি, ট্যাক্সি পার্কিং - ৪০ রুপি) ->
#মাওসমাই_কেভ (টিকেট -২০ রুপি, পার্কিং -৪০ রুপি) ->
#মাওসমাই_ইকো_পার্ক (সেভেন সিস্টার্স ফলস্ টপ, টিকেট -১০ রুপি, পার্কিং- ২০ রুপি) ->
#সেভেন_সিস্টার্স_ফলস্_ভিউ_পয়েন্ট (টিকেট -১০ রুপি, পার্কিং -২০ রুপি) ->
#নোহকালিকাই_ফলস্ (টিকেট -১০ রুপি, পার্কিং - ২০ রুপি) ->
#লাইপাতেং_ফলস্ (টিকেট - ১০ রুপি, পার্কিং - ২০ রুপি) -> চেরাপুঞ্জি হোটেল এই পুরো পথের ট্যাক্সি রিজার্ভের ভাড়া পরবে ১২০০-১৫০০ রুপি।
পথেই কোনো হোটেল থেকে ১২০ রুপিতে দুপুরের খাবার পেয়ে যাবেন।
এইসব জায়গা ঘুরে সন্ধ্যায় হোটেল থেকে ব্যাকপ্যাক নিয়ে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং এর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ুন। চেরাপুঞ্জি থেকে শিলং ট্যাক্সি রিজার্ভ ১৫০০-২০০০ রুপি। সময় লাগবে আড়াই ঘন্টার মতো।
#শিলং পৌছে হোটেল ঠিক করে নিন। পুলিশ বাজারের দিকে ২ বেডের এক রুম ভাড়া পড়বে ২০০০-৩০০০ রুপি। আর একটু ভিতরে মফরান এর দিকে Godwin Hotel এ ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপি। হোটেল ঠিক করে শপিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। পুলিশ বাজারের আশেপাশেই শপিং করে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসুন। রাতের খাবার ভাত + ডাল + সবজি + বিফ/চিকেন ১৫০ রুপি পড়বে।
.
.
৪র্থ দিন : সকালে উঠে নাস্তা লুচি + চানা + ডিম ভাজা ৪০ রুপি।
শিলং এর পুলিশ বাজার থেকে ->
#উমিয়াম_লেক (বারাপানি লেক নামেও পরিচিত, টিকেট-৫০ রুপি, পার্কিং-২০০ রুপি) ->
#এলিফেন্ট_ফলস্ ( টিকেট -৫০ রুপি, পার্কিং-২০০ রুপি) -> হোটেল এই পথটুকুর জন্য ট্যাক্সি রিজার্ভ নিবে ৫০০ রুপির মত।
ফিরে ১২০ রুপি দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ডাউকির উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি রিজার্ভ নিয়ে রওনা দিন। ভাড়া ১৫০০-২০০০ রুপি। মনে রাখবেন শিলং থেকে অবশ্য অবশ্যই দুপুর ১২ টার মধ্যে ডাউকির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। কেননা বিকাল ৫ টার ভেতর ডাউকি ইমিগ্রেশন বন্ধ হয়ে যায়।
ডাউকি এসে ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বাংলাদেশে প্রবশ করে এখানকার ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় বাস থেকে যেখানে নেমেছিলেন সেখান থেকে সিলেটগামী বাসে উঠে পড়ুন। ভাড়া - ৬০ টাকা। সিলেট পৌছে রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে ঢাকার বা যে অঞ্চল থেকে এসেছেন সেখানকার বাসে উঠে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছে যান।
ডাউকি বর্ডার দিয়ে ভিসা থাকতে হবে।
আগে থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স রসিদ সাথে রাখুন। কারণ তামাবিলে নাও পেতে পারেন।
মেঘালয়ের শিলংএর পুলিশ বাজারের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে টাকার মূল্য অন্যান্য বর্ডার এরিয়া থেকে কম। ডাউকিতে টাকা বা ডলার ভাঙ্গানোর জন্য কাউকে খুঁজে পাইনি।
 অবশ্যই ছাতা বা রেইনকোর্ট সাথে রাখবেন।
 প্রতিটি স্পটেই মানুষের টিকেটের পাশাপাশি ডিএসএলআর ক্যামেরার জন্য ২০-৪০ রুপির টিকেট করতে হয়।
সময় থাকলে মেঘালয়ের আরো বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে দেখার মত জায়গা অনেক আছে।
ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
 ২০১৭ সালের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা।
দেশের ভেতর বা বাইরে যেখানেই যান না কেন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। এমনকি থু থু ও না। দয়া করে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো আচরণ বা কাজ বিদেশের মাটিতে করবেন না।

ঘুরে আসলাম ট্রেজার হাউজ অফ আর্ট এবং দ্যা লাস্ট হিমালায়ান কিংডম ভুটান

বিদঘুটে হর্নের শব্দহীন একটা দেশ ভুটান! শান্ত, সুনিবিড় আর কোলাহলমুক্ত! পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর, ভদ্র এবং সুসভ্য নাগরিক, স্রোতোবহা এবং স্বচ্ছ নদী আর বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড় দেখতে চান? সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে অসাধারণ মনুমেন্ট, স্ট্যাচু, বৈদেশিক কালচার, স্নো ধরার সুযোগ ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু!
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সর্পিল রাস্তা। তীব্র গতিতে বাক নিচ্ছে ড্রাইভার। হাত ফসকালেই হাজার মিটার নিচে ছিটকে পড়বে। কতো গাড়ি পাশ কাটাচ্ছে। কিন্তু কেউ হর্ন দেয় না। এতো অবাক লাগলো দেখে আমার! আমাদের দেশে হর্নের শব্দে টেকা দায়!
মানুষ জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দেখলে গাড়িগুলো অটোমেটিক থেকে যাচ্ছে, কি আশ্চর্য! কতো সভ্য ওরা! আবার মানুষ থেমে যাচ্ছে দেখে ড্রাইভাররা সংকেত দিয়ে বলছে, " তুমি যাও!"
আমরা গিয়েছি ৪ জন অফিসের কলিগ। ৫ দিন ছিলাম। প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো লেগেছে। ঘুরেছি থিম্পু, পারো এবং পুনাখা!

যেতে লাগবে কি?
- ভারতের ট্রানজিট ভিসা! ভিসা ফর্ম ফিল আপ করে এপ্লাই করেন, চৌদ্দ - পনের দিনের ভিসা পাবেন। যাওয়ার সময় ৩ দিন, এবং আসার সময় ৩ দিন চাইলে ভারত ঘুরতে পারবেন। বাসের টিকেটটা টাইম মিলিয়ে কাটবেন যাতে ভিসা পাওয়ার পরে ওই টিকেটে যেতে পারেন।
আপনি চাইলে আকাশপথেও যেতে পারেন। আমরা যখন যাই তখন টিকেট এভেইলএবল ছিলো না, একটু আগেই কাটবেন টিকেট যদি এয়ারে যেতে চান! ওখানে গেলে অন এরাইভাল ভিসা দিয়ে দিবে।

আমি ২১ তারিখ রাতে শ্যামলী পরিবহনে রওয়ানা দেই। বহুকষ্টে অফিস থেকে দুইদিন ছুটি নেই, তারসাথে ৩ দিন টানা ছুটি মিলিয়ে ৫ দিনের প্ল্যান নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
কল্যাণপুর - বুড়িমারি ; যাত্রা বাসে ; সময় লাগবে প্রায় ১০/১১ ঘন্টা, টিকেটের দাম নিবে ১৩০০-১৫০০ টাকা।
ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া লাগবে ৫৫০ টাকা। এটা বাসেই দিয়ে দিবেন, তাহলে ওরাই প্রসেস করে দিবে আপনার পাসপোর্ট।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে যাবেন তারপর। ওখানে গিয়ে ছবি তোলা লাগবে। আপনি চাকুরীজীবী হলে অবশ্যই NOC লেটার নিয়ে যাবেন। তারপর বাংলাদেশি কাস্টমস ক্রস করে ইন্ডিয়ান কাস্টমস ক্রস করবেন। তারপর ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে প্রসেসিং করবেন। এখানে ১০০ রুপি দালালকে দিলে কাজ ত্বরান্বিত হবে। পাসপোর্ট এর কাজ শেষ হলে টাকা এবং ডলার ভাংগায় ইন্ডিয়ান রুপি করে নিবেন। ভুটানে সবজায়গায় রুপি চলে। এখন আপনি ওয়েস্ট বেংগলের চ্যাংরাবান্ধায় আছেন।
চ্যাংরাবান্ধা - জয়গাও; যাত্রা মিনি মাইক্রোতে ; সময় লাগবে ৩/৪ ঘন্টার মতো ; ভাড়া লাগবে ১৪০০-১৭০০ রুপি, ৬ জন বসতে পারবেন অনায়াসে।

জয়গাও হলো ভারত-ভুটান বর্ডার। ভারতে হলো জয়গাও আর ভুটানে হলো ফুন্টসোলিং। ভারত-ভুটান ওপেন বর্ডার। কোন হ্যাসেল নাই। ভারত ইমিগ্রশন অফিসে গেলেই আপনার পাসপোর্ট এ সীল মেরে দিবে। তারপর হেটে ভুটানে ঢুকে পড়বেন এবং ভুটান ইমিগ্রেশন থেকে পারমিট নিয়ে নিবেন। ভারতের এলাকাটা নোংরা, কোলাহলপূর্ণ। ফুণ্টসোলিং ঢুকলেই আপনার মনে হবে অন্য এক দুনিয়ায় চলে আসছেন। সবকিছু নিয়ম মেনে চলছে। শান্ত, কোলাহলপূর্ণ এবং কোথাও কোন ধূলোময়লা নেই। মীনা কার্টুনের ভাষায় বলতে গেলে, " এ আমি কই আইলাম! "

ফুন্টসোলিং থেকে থিম্পু যেতে ৫/৬ ঘন্টা লাগে, বাহন ট্যাক্সি। ভাড়া লাগবে ২৫০০-৩০০০ রুপি। ৪ জন বসতে পারবেন। এখান থেকে বাসও যায়। তবে বাস সবসময় ছাড়ে না এবং পরিমাণে কম। আমরা ট্যাক্সি দিয়ে গিয়েছিলাম থিম্পু।
ফুন্টসোলিং থেকে থিম্পুর রাস্তায় পাবেন আসল ভুটানের স্বাদ! নৈসর্গিক দৃশ্য! এই জার্নির কথা কোনদিনও ভুলবো না। আহা! পাহাড়ের প্রতিটা বাক এখনো ভুলতে পারি না। প্রতিটা বাকে বাকে সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য!

শীতের ব্যাপারে কিছু কথা। ফুন্টসোলিং থেকে রাস্তা ধরে যতো থিম্পুর দিকে যাবেন তাপমাত্রা ততই কমবে। অবশ্যই অবশ্যই শীতের পোষাক নিবেন। আমরা রাত ১১:৩০ এ থিম্পু পৌঁছাই। গাড়ি থেকে বের হয়েই দাত কপাটি লেগে যাবার জোগাড়, এত্তো ঠান্ডা। শূন্য ডিগ্রী, হিমাংকের নিচে চলে যায় যায় অবস্থা। থার্মাল ইনার, আপার কিনে নিয়েছিলাম বংগবাজার থেকে, ওটা অনেক কাজে দিয়েছে। অবশ্যই কিনে নিবেন!

আমরা থিম্পুতে ছিলাম হোটেল টাক্টসাং এ! তারপর পারোতে গিয়ে ছিলাম হোটেল পারোতে। ফুন্টসোলিং এ ছিলাম হোটেল হ্যাভেন ইনে। ভালোই ছিলো হোটেলগুলো। ৪ জনের স্ট্যান্ডার্ড রুমে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ রুপি। যতো আগে বুক দিবেন তত কমদামে রুম পাবেন। রুমে টিভি, এসি, হিটার, গিজার পাবে এই রেটের মধ্যই। এর মধ্য কিছু ফ্যাসিলিটি কম নিলে আরো কম দামে রুম পাবেন। অনলাইম থেকে নাম্বার নিয়ে ডিরেক্ট কল দিয়ে হোটেল বুক করে ফেলবেন।
খাবার নিয়ে কিছু কথা বলি। সত্যি বলতে গিয়ে আমার খেতে কষ্ট হয়েছে। আমি ভেজিটেবল একেবারেই পছন্দ করি না। ওখানে ভেজিটেবল মোটামুটি ভালো আছে। ইন্ডিয়ান নন ভেজ রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে রাইস, চিকেন, মাটন সবই পাবেন। ইন্ডিয়ান ট্রাডিশনাল আইটেমগুলোও ওখানে পাবেন। ঘুরতে গেলে খাবার নিয়ে এতো চিন্তা না করাই উত্তম। প্রতিবেলার খাওয়াদাওয়া ১০০-১৫০ রুপির মধ্য করতে পারবেন। ওদের স্ট্রিটফুডগুলোও ভালো, ট্রাই করবেন
ঘুরতে যাবার জন্য ট্যাক্সি বেস্ট। প্রতিদিন ভাড়া এরাউন্ড ২০০০-৩০০০ রুপি। দরদাম করে নিবেন।

খুব প্রাণোচ্ছল আর সাহায্যকারী মানুষ ভুটানিজরা! আপনি যা জানতে চাইবেন তা জানানোর পরেও ওরা আপনাকে ছাড়বে না, আপনার যা জানা দরকার সব বলে দিবে। এতোই হেল্পফুল ভুটানিজরা। খুব বেশি করে মনে থাকবে চেলালা পাসের স্নো ধরার এবং দেখার স্মৃতি! আরো মনে থাকবে সাসপেনশন ব্রিজ, বুদ্ধের বিশাল স্ট্যাচু, মোচু নদীতে র‍্যাফটিং এবং ভুটানিজদের আতিথেয়তা!

Tuesday 20 March 2018

নকশিপল্লী, পূর্বাচল

যারা ঢাকার মধ্যেই যানজটের থেকে দূরে গিয়ে একটু শান্তির আভাস পেতে চান তাদের জন্য একটা ভাল জায়গা হতে পারে পূর্বাচলের বালু ব্রিজের পাশের এই সুন্দর এলাকা.. এখানে মোটামুটি অনেক খাওয়ার হোটেল, রেস্তোরা আছে কিন্তু আমার দেখা মতে একটু ভিন্ন ধাচের একটা রেস্তোরা হল "নকশিপল্লী"... আপনি এখানে নদীর পাশে বসে কিছুটা সুন্দর সময় কাটাতে পারেন.. ইচ্ছে করলে বোটে ঘুরতে পারেন.. এমনকি ঘোড়ার গাড়িতে চড়তে পারবেন!!! আর আশে পাশে হাটার অনেক জায়গা আছে.. চারপাশের কাশফুল গুলো যখন এক দল বেধে উড়ে আসবে তখন পরিবেশ হবে আরো রোমাঞ্চকর..

কিভাবে যাবেন:
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে আগে আপনাকে ৩০০ ফুটে আসতে হবে..আপনি চাইলে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন.. ৩০০ ফুট থেকে পূর্বাচল যাওয়ার পথে ২টা ব্রিজ পরছে.. প্রথমে পড়বে বোয়ালিয়া ব্রিজ তারপরে পড়বে বালু ব্রিজ.. বালু ব্রিজ পার হয় ডানে টার্ন নিতে হবে ওখানে দেখবেন লেখা আছে ভোলানাথপুর কবরস্থান.. এই ভিতরের পথ ধরেই চলে যাবেন.. আর যাদের গাড়ি নেই ৩০০ ফুটে এসে এখান থেকে অটোতে আপনাকে যেতে হবে "বালু ব্রিজ" প্রতিজনের অটোভাড়া নিবে ৩০ টাকা. অটো থেকে নেমে ভিতরে ১০-১৫ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন "নকশিপল্লী"

কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমন

সুন্দরবন ভ্রমন : ব্যক্তিগত সুখস্মৃতি ও একজন গাইডের পাঁচালী।
নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে টার্গেট করে চারমাস আগ থেকেই খোঁজখবর করছিলাম কিভাব সুন্দরবন যাব, কাদের সাথে যাব এসব। ToB Helpline এর সুবাদে মংলার স্থানীয় এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হলো, এনশিওর করলেন আমাদের ট্যুরের সব আয়োজন করে দিবেন বলে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের দিনকয়েক আগে জানালেন কেবল আমাদের বার জনের জন্য ব্যবহার উপযোগী তার লঞ্চটি আদারওয়াইজ ভাড়া হয়ে গেছে। অনুরোধ করলেন আমাদের ডেট পেছাতে। সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিলাম তাকে। কিন্তু সংগত কারনেই মন খারাপ হলো।

ToB Helpline এর সাহায্য নিয়ে আবার খোঁজাখুঁজি। ঢাকাস্থ এক ট্যুর অপারেটর এর সাথে কথা হলো। এনশিওর করলেন তিনিও। শর্ত এবং চাহিদা মোতাবেক ৫০% অর্থ অগ্রিম পে করে দেই। কিন্তু জার্নি শুরুর তিন/চারদিন আগে অনুরোধ করলেন অবশিষ্ট অর্থও পে করে দিতে, ভালো লাগেনি যেটা। লজিক্যালও মনে হয়নি। এরপর বারজনের জাহাজ নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে অনুরোধ করলেন বড় একটি গ্রুপের সাথে বড় লঞ্চে যেতে। না করায় অগত্যা রাজি হলেন বিকল্প ব্যবস্থা করতে। মন খারাপ হলো আবারো।
নির্ধারিত দিনে চট্টগ্রাম থেকে আমরা যাত্রা শুরু করি। হানিফ পরিবহন, সৌদিয়া এবং ঈগল পরিবহন চট্টগ্রাম- খুলনা রুটে নিয়মিত যাতায়াত করে। সচারচর এ গাড়িগুলো মংলা পর্যন্ত যায় না বলে মংলা থেকে বত্রিশ কিমি দূরে কাটাখালী নামক পয়েন্টে নেমে যাওয়াটাই সুবিধাজনক। তাই করি আমরা। সেখান থেকে ১,৫০০.০০ টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে মংলা পৌছাই ঘড়ির কাটা ধরে প্লান মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের পনর মিনিট পর। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

জনাব মোঃ কায়সুজ্জামান পিকলু, (Piqlu Zaman) ২৮/৩০ বছরের টগবগে এক যুবক, ট্যুর অপারেটর যাকে আমাদের গাইড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আগের দিন রাতে, অপেক্ষা করে ছিলেন বাস স্টান্ডেই। প্রাথমিকভাবে পরিচিত হলাম, কথা হলো টুকটাক। প্রথম পরিচয়েই মনে হলো অসম্ভব আন্তরিক এবং ডেডিকেটেড। তার কাছেই জানলাম, আমাদের ট্যুর অপারেটর মাথাপিছু টাকার একটা অংশ রেখে আমাদেরকে এই গাইড তথা অপারেটর এর কাছে হ্যান্ডওভার করে দিয়েছেন। সবকিছু গুছিয়ে আনার দায়দায়িত্বটা তারই। অর্থাৎ একপ্রকার বিক্রি হয়ে গেছি। অবশ্য এতে ভালোই হয়েছে।
লঞ্চে উঠে পিকলু আমাদের তিন দিন আর দুই রাতের ওভারঅল ট্যুর প্লান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিলেন। আমরা চলতে শুরু করলাম পশুর নদির বুক চিড়ে। ফ্রেশ হয়ে বসলাম নাস্তার টেবিলে।

ট্যুর অপারেটর যেমনটা বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই ম্যানু ধরে লঞ্চে খাবার সার্ভ করা হয়েছে সময় ধরে। সাদা ভাত, ভর্তা, ডিম, খিচুড়ি, পোলাও, রুপচাদা, রুই এর সাথে খুলনার বিখ্যাত ফাইস্যা মাছ, গরু, দেশী মুরগি, কবুতর, বারবিকিউ, ফ্রুটস, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিবেলায়ই খাবার ছিলো পরিমানে অত্যধিক আর স্বাদে অতুলনীয়। দশ/ বার বছরের অভিজ্ঞ পাঁচক আংকেল হাসিমুখে সবটুকু আন্তরিকতা দিয়েই তার কাজটি করে গেছেন নিষ্ঠার সাথে।

প্লান অনুযায়ী হাড়বাড়িয়া, কটকা, টাইগার পয়েন্ট, জামতলী সী বীচ, দুবলার চর এবং করমজল হয়ে আমরা মংলা ফেরত আসি। লঞ্চের আকার ও সমুদ্রস্রোত বিবেচনায় নিয়ে হিরনপয়েন্ট যাওয়া বাদ দিতে হয়েছে। শুরু থেকে শেষ, লঞ্চে ষাট ঘন্টার জার্নিতে সবটা সময়েই আমরা আমাদের গাইডকে পেয়েছি বন্ধুর মতো, ভীষন কেয়ারিং হিসেবে। কখন কি করতে হবে, কোন ধরনের ড্রেসআপ কমফোর্টেবল হবে, কিভাবে পথ চলতে হবে, বন্য পশু প্রানীর দেখা পেলে কী করতে হবে সব কিছু আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন ছাত্র পড়ানোর মতো করে। কথা প্রসংগে বলছিলেন, কেবল পেশা নয় বরং সুন্দরবন তার জন্য একটি আবেগের জায়গাও। আমাদের এক গ্রুপমেইড সবার অগোচরে তাকে হরিনের মাংস ম্যানেজ করা যায় কিনা বললে স্পষ্টতই না করেছেন। বলেছেন, আমাদের কারো কারো শখের কারনে বাঘের মতো হরিনটাও বিলুপ্ত হতে শুরু করলে এ বনের অবশিষ্ট থাকবে কী! ইস! সবার যদি এই বোধটুকু হতো! একজন পিকলুর জন্য আমাদের ট্যুরকালীন সময়টা নি:সন্দেহে সুখকর হয়েছে অনেক। প্রথম দিকের মন খারাপ করাটা উবে গিয়ে কেবল আনন্দঘন সময়ই কাটিয়েছি আমরা।
পৃথিবীখ্যাত সুন্দরবন, আমাদের দেশটির জন্য সৃষ্টিকর্তার রহমতস্বরুপ এ বনের সৌন্দর্য আর বিশালতা, বনকেন্দ্রিক নৈসর্গিক শোভা আর আমাদের মুগ্ধতা বিষ্ময় জাগানিয়া সুখস্মৃতি কেবল এখন। খুব কাছ থেকে দেখে প্রকৃতঅর্থেই প্রেমে পড়ে গেছি এই বনের,আমাদের গর্বের ধনের।
অপেক্ষাকৃতভাবে, বনে ঘুরার স্পটগুলোকে অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে আমার। তবুও অধিকতর সতর্কতা প্রয়োজন। এখানে সেখানে এটা সেটা না ফেলে, বনের গাছপালার ডাল না ভেংগে, উচ্চস্বরে শব্দ করে পশুপাখিদের স্বাভাবিক লাইফে ডিস্টার্ব না করে আমরা প্রমান দিতে পারি একজন সত্যিকারের পর্যটনপ্রেমী হিসেবে, প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে। এটা মহানুভবতা নয়, বরং দায় আমাদের, আমাদের দায়িত্ব।

ঘুরে আসুন মহেরা জমিদার বাড়ী ও যমুনার পাড় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশ

আগেই বলে রাখি পোস্টটা অনেক বড় আর যাওয়া-আসার সকল খুঁটিনাটি লেখা , কারো ওদিকে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই পুরোটা পড়বেন ।
* গ্রুপের পোস্ট দেখতে দেখতে আর সইলো না , সকালে এই ২ টি প্লেস কভার দেয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিলাম । আমার মনে হয় বাংলাদেশে এর থেকে সুন্দর-পরিপাটি জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর আর দ্বিতীয়টি নেই । এলাকাটিতে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার অবস্থিত তাই তাদের তত্বাবধায়নে রয়েছে পুরো এরিয়াটি । ফুলের বাগান,বসার স্থান,শিশুদের পার্ক,ছোটখাটো চিড়িয়াখানা ও সংস্কারকৃত বাড়িগুলো এর আকর্ষন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রতিটি যায়গায় পুলিশ পাহারায় থাকে, তাই সবকিছু যেমন গোছালো,তেমনি পরিস্কার । ছবি তোলার জন্যে লনে ঝাড়ফুক না দিয়ে বসে পড়লেও চলে বলা যায় 
জমিদার বাড়ি দেখা শেষে সেখান থেকে চলে যাই যমুনা ব্রীজ দেখতে । যদিও চেয়েছিলাম বিকালের দৃশ্য উপভোগ করতে,কিন্তু কারনবশত আমাদের যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,ওইদিকে রিসোর্টের গেটও বন্ধ । পরে ভ্যানচালক আমাদের নিয়ে যায় একেবারে শেষ মাথায় , ওখান থেকে হাটতে হাটতে নদীর কিনারে চলে যাই,আর ধরা পড়ে এই দৃশ্য,যদিও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা,তবুও একটু ভয় লাগে কারন অন্ধকার পুরো,আর আশেপাশে আমরা ২ বন্ধু ছাড়া কেউ নেই । সেখান থেকে বেড়িয়ে আবার চলে আসি রেলস্টেশনে,সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা । আসুন বলি কিভাবে যাওয়া যাবে,খরচ কেমন হবে - 

প্রথমে মহেরা গেলে-
১, মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল এর বাস আছে ( নিরালা,ধলেশ্বরী) নিরালায় ভাড়া ১৫০ টাকার মত, আমরা মহাখালী নেমেই ধলেশ্বরী পাই,আর প্রথম কাস্টমার হওয়ায় আমাদের থেকে ৯০ টাকা করে ভাড়া নেয় । কল্যানপুর-গাবতলী থেকে এসি বাসও আছে, ২৫০ টাকা ভাড়া ( সকাল-সন্ধ্যা,সোনিয়া)
২. এছাড়া আবদুল্লাহপুর চলে যান,সেখান থেকেও যেকোন উত্তরবঙ্গের গাড়ীতে চড়ে বসুন ,ভাড়া ১০০-২০০ নিতে পারে যদি বাসে উঠায় আর বাসের অপারেটর ভেদে ।
৩. মতিঝিল থেকে ওয়েলকাম,সাইনবোর্ড থেকে ঠিকানা,মিরপুর থেকে ইতিহাস ইত্যাদি বাসে করে চন্দ্রা চলে আসুন,এখান থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে উঠুন,৫০ টাকা নিবে । বলে রাখি,যেই বাস মহাখালী/আবদুল্লাহপুর এ পাবেন,সেই বাসই চন্দ্রা থেকে পাবেন 
বাসে তো উঠলেন এবার হেলপার/সুপারভাইজার কে বলে রাখেন মহেরা পুলিশ লাইন যাবেন । আপনার যাত্রাপথে হাতের ডানপাশে পড়বে,সেখানে তারা নামিয়ে দিবে,নেমে রাস্তা পার হয়ে ১৫ টাকা করে শেয়ার সিএনজি তে মহেরা ।
ভিতরে প্রবেশের জন্যে টিকেট ৫০ টাকা । তাদের খাবারের ব্যবস্থা আছে, টিকেট কাউন্টার থেকেই খাবারের মেনু সম্বলিত কাগজ দিয়ে দেবে, ১২ টার মধ্যে অর্ডার করে ফেলবেন অবশ্যই । তাছাড়া শুকনো খাবারও পাওয়া যায় ।

মহেরা টু বঙ্গবন্ধু সেতু -
মহেরা থেকে বেড়িয়ে রিকশা থাকলে রিকশা নেন,অথবা সিএনজি কে বলুন নাটিয়াপাড়া যাবেন,ওটা হলো বাসের স্টপেজ,কোন না কোন বাস থামাবেই । রিকশা রিসার্ভে ৬০ টাকা নিবে,সিএনজিতে ২০/২৫ নিতে পারে ।
ওখানে নেমে এবার টাঙ্গাইল বাদে যেকোন বাস আসলে হাত ইশারা করুন,বাসের দয়া হলে থামাবে,আর যাত্রী নেয়ার জন্য উৎসুক থাকলে আপনারেই টানাটানি করবে । যাইহোক আমাদের কপালে দয়ার বাসই পড়ে,হাত দেখানোর পর একটু দূরে থামায়,দৌড়ে বাসে উঠে পড়ি । বাসে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন ব্রীজের এইপাড় নামবেন,ভাড়া কত । ১৫০/২০০ চাইবে,ভয় পাবেন না । ১০০ বলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকুন,আপনাকে নেবেই । এছাড়া টাঙ্গাইল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ব্রীজের এইপাড় যেতে পারেন,সেক্ষেত্রে ৪০/৫০ টাকা লাগবে,কিন্তু লোকাল হওয়ায় সময় লাগবে বেশী । আমরা ২ জনে ১৫০ টাকা দেই ভাড়া,আর পৌছাতে ৪০/৫০ মিনিট লাগে,তাও বাসের স্পিড ছিল ৮০ kmph

বাসের হেলপার/সুপারভাইজার কে বলে রাখুন রিসোর্ট এ যাবেন,তারা আপনাকে ব্রীজের আগে গোল চত্বরে নামিয়ে দিবে । নেমে ভ্যানে চড়ে ১০ টাকা দিয়ে চলে যান পার্কের ভিতর,বলে নিয়েন ব্রীজ দেখতে যাবেন । ওখানে ঘোরাঘুরি শেষে ভ্যান নিয়ে রেলস্টেশন চলে যান,ঢাকাগামী ট্রেন এ চলে আসুন । আমাদের জন্যে একটাই ট্রেন ছিল, ৭ঃ৩০ টায় , ১৩৫ টাকা ভাড়া ,সিট সব বুক আগে থেকেই। এত রাস্তা তো দাড়িয়ে আসা যায়না তাই শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজায় বসে ঢাকা চলে আসি , হয়ত হাত পায়ের তাপমাত্রা মাইনাস এ নেমে গিয়েছিল 
আমাদের খরচ ছিল এরকম (একজন এর খরচ লিখলাম) - বাসা-মহাখালী (২০)+ টাঙ্গাইল বাস (৯০)+মহেরা সিএনজি(১৫)+টিকেট(৫০)+মেইন রোড পর্যন্ত রিকশা (৬০)+ যমুনা পর্যন্ত বাস(৭৫)+যমুনার পাড় ভ্যানে যেতে(২০)+রেলস্টেশন আসতে(৩০)+ট্রেনে ঢাকা(১৩৫) = ৪৯৫ টাকা । ট্রেন বাসার কাছে ব্রেক দেয়ায় বাসায় আসতে ভাড়া লাগেনি 
আপনারা যা করবেন -
* অবশ্যই খুব সকালে রওয়ানা দিবেন , ৬ঃ৩০ টার মধ্যে,এতে করে রাস্তায় হালকা জ্যাম থাকলেও মহেরা ১১ টার মধ্যে পৌছাবেন । যাওয়ার জন্যে ট্রেনও আছে,কিন্তু গতকাল ( সোমবার ) সকাল ৮ টার ট্রেনের অফডে ছিল যার জন্যে বাসে যাওয়া লাগে । ট্রেন শিডিউল লাগলে কমেন্টে বলবেন,দিয়ে দিবো । ট্রেনে ঢাকা থেকে গেলে মির্জাপুর নেমে মেইন রোডে এসে মহেরা যাবেন,আর টাঙ্গাইল নামলে সেখান থেকে গাজীপুর/চন্দ্রা/ঢাকাগামী বাসে উঠে মহেরা নামবেন । ওটা আমার মনে ঝামেলাপূর্ন ।
* ছবি তোলেন,ঘোরাঘুরি করেন,খাবার গ্রহন করেন সমস্যা নেই ।মহেরা থেকে ২ টার মধ্যে বের হয়ে যান। কারন মেইন রাস্তায় গেলে বাস কোনটা পাবেন,আর কখন পাবেন গ্যারান্টি নেই। আমরা ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
* বাস এ রেলস্টেশনেই নেমে যান,আর খোঁজ নিন ঢাকাগামী ট্রেন কখন কখন আছে । আমরা ৬ঃ৩০ এ একটা ট্রেন ছিল বলে জানতাম,ঘোরাঘুরির পর কাউন্টারে গিয়ে দেখি একটাই ট্রেন আছে,৭ঃ৩০ টায় । ট্রেনের খবর নিয়ে গেলে কতক্ষন ঘুরতে পারবেন তার আন্দাজ হবে । ট্রেন স্টেশন থেকেও ভ্যানে রিসোর্টে যেতে পারেন ।
* যদি সেখান থেকে বাসে আসতে চান তাহলে ডাইরেক্ট বাস সহজে পাবেন না । এর জন্যে প্রথমে লেগুনাতে এলেঙ্গা,এরপর সেখানে বাস ঢাকাগামী বাস । 

* পোস্ট পড়ে বেশী টেনশনে পড়ে গেলে গাড়ীভাড়া করে চলে যান , বড় গ্রুপ গেলে খরচ পুষিয়ে যাবে।
আর হ্যা ভাই/বোন । অবশ্যই মহেরা ও যমুনার পাড় কোনটাই ময়লা/আবর্জনা ফেলে অপরিস্কার করবেন না । মহেরা পুলিশের এরিয়া , আর যমুনার তীর আর্মি এরিয়া । অপরিস্কার করবেন তো জরিমানাও দিতে হবে: